মঙ্গলবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৭

প্রচলিত ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে

প্রচলিত ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে মনুষ্যজাতি আশরাফুল মাখলুকাত, মুসলমান, বৌদ্ধ, খৃষ্টান, ইহুদি, হিন্দু, শিখ ইত্যাদি ধর্ম বলতে কোন ধর্ম নেই। উদাহরণতঃ হিন্দু বলতে স্থান ও ভাষাগত জাতি বুঝায়, ধর্মগত নয়। ঐতিহাসিকদের মতে হিন্দুকুশ, হিমালয় পর্বতের পাদদেশে, সিঁন্দু নদের অববাহিকায় অথবা হিন্দি ভাষাভাষীদের সাধারণতঃ হিন্দ, হিন্দি, সিঁন্দু ইত্যাদি থেকে হিন্দু বলা হয়। এ সকল এলাকায় মোসলেম, বৌদ্ধ, ইহুদি, খ্রিস্টান বা শিখ যে কোন জাতিই বাস করুক তাদেরকেই সাধারণতঃ হিন্দু বলা হ’তো। প্রাচীন ইতিহাস, ভূগোলের দৃষ্টিকোণ থেকে পাকভারত উপমহাদেশের সকলেই আমরা হিন্দু।

প্রচলিত হিন্দু ধর্মের মূল নাম সনাতন ধর্ম অর্থাৎ সত্য ধর্ম এর মূল বাণী ‘ঔঁ’ অর্থাৎ ‘শান্তি’ এটিই আরবিতে ‘ইসলাম’; বেদ-গীতার অনুসারিদের আর্য জাতি বা ভদ্র, নম্র বা আদর্শ জাতি বলা হ’তো, আরবিতে যাকে ‘মোসলেম’ বলা হয়।

পূর্বেই বর্ণিত হয়েছে যে, প্রচলিত মোসলমান ধর্ম, খ্রিস্টান ধর্ম ইহুদি ইত্যাদি ধর্ম বলতে কোন ধর্ম বা জাতি নেই আর তাদের গ্রন্থেও ঐ নামের কোন ধর্ম নেই। ইহা স্ব স্ব দলের স্বার্থবাদী মৌলবাদ কর্তৃক সংযোজিত ও প্রণীত। অতীতের কোন ধর্মগ্রন্থই অপরিবর্তীত না থাকলেও তা যে একই ছিল তার কিছু কিছু সাক্ষ্য বহন করে প্রত্যেকটি গ্রন্থে এমনকি উপধর্মগ্রন্থেও। বেদ, গীতা সবচেয়ে পুরানো বিধায় সংক্ষেপে বেদ- কোরানের সাদৃশ্য ও গুরুত্বপূর্ণ কিছু বাণী নিম্নে প্রদত্ত্ব হলো:

১. গীতা: ‘একমেবা দ্বিতীয়ম’, অর্থ: এক (উপাস্য) ছাড়া দ্বিতীয় নেই।

কোরান: ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেই ।

২. গীতা: ‘হি জাতস্য মৃত্যু; ধ্রব মৃতস্য চ জন্ম ধ্রবং; তাষ্মাৎ তং শোচীতুং ন অহর্সি’। [গীতা-শ্লোক-২৭ ] অর্থ: যে জন্মে তার মরণ নিশ্চিত, যে মরে তার জন্ম নিশ্চিত। সুতরাং অবশ্যাম্ভাবী বিষয় তোমার শোক করা উচিৎ নয়।

কোরান: অ তুখরিজুল হাইয়া মিনাল মাইয়াতি অ তুখরিজুল মাইয়াতা মিনাল হাইয়া। [৩: ২৭; ৬: ৯৫] অর্থ: তুমিই মৃত থেকে জীবন্তকে টেনে বার করো আবার জীবন্ত থেকে মৃতদের টেনে বার করো।
৩. বেদ: যে ধনবান লোক পরকে প্রতিপালন করে না তাকে ঘৃণা করি। [বেদ: ১/১২০/১২]।

কোরান: --অ মীম্মা রাজ্জাকনা হুম ইউনফেক্বুন-।-অ ইয়ামনাউনাল মা-উন। [ ২: ৩; ১০৭: ৭ ] অর্থ: তারাই সফলকামী যারা তাদের ধন-সম্পদ থেকে সাহায্য করে।--ধংস হোক, যারা প্রতিবেশীদের সহযোগিতা করে না।

৪. বেদ: তোমাদের অভিপ্রায় এক হোক, হৃদয় এক হোক, মন এক হোক, তোমরা যেন সর্বাংশে সম্পূর্ণরূপে একমত হও। [বেদ:১০/১৯১/৪]

কোরান: অ আতাছি’মু বি- হাবলিল্লাহি জামিয়া-অ লা তাফাররাক্বু। [৩: ১০৩] অর্থ: তোমরা আল্লাহর রজ্জু একত্রে মজবুতভাবে আকড়ে থাকো। তোমরা বিভিন্ন মতে এবং দল উপ-দলে বিভক্ত হইও না।

৫. গীতা: যিনি বিশ্বকর্মা, তার মন বৃহৎ তিনি নিজে বৃহৎ, তিনি নির্মাণ করেন, ধারণ করেন, তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ এবং সকল কিছু নিয়ন্ত্রণ করেন।

কোরান: অ লীল্লাহীল মুলকোচ্ছামা-অতি অল আর্দ্ব- ক্বাদির। [৫: ১৭] অর্থ: দৃশ্য-অদৃশ্য এবং ইহার মধ্যে যা কিছু আছে সবকিছুরই সার্বভৌমত্ব আল্লাহরই। তিনি যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন। আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্ব শক্তিমান।

৬. বেদ: যিনি আমাদের জন্ম দাতা, পিতা, যিনি বিধাতা, যিনি বিশ্ব-ভূবনের সকল ধাম অবগত আছেন। তিনিই একমাত্র। অন্য সকল ভূবনের লোকে তার বিষয় জিজ্ঞাসাযুক্ত হয়। [বেদ-১০/৮২/৩]

কোরান: হু অল্লা হুল্লাজী লা ইলাহা ইল্লা’হুঅ, আল মালেকুল কুদ্দুছুচ্ছালা-মুতাকাব্বেরু; ছুবতানাল্লাহি- ইউসরেক্বুন। [৫৯: ২৩] অর্থ: তিনি আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই, তিনিই পবিত্র, তিনিই শান্তি, তিনিই নিরাপত্তা বিধায়ক, তিনিই রক্ষক, তিনিই পরাক্রমশালী, তিনিই প্রবল।

৭. বেদ: বিশ্ব নিখিলের সর্বত্র যে সকল কাজ হয়ে চলছে প্রকৃতপক্ষে তার মূলে কোন দেবতা নেই, আছেন কেবল এক ঈশ্বর। সকল কিছুই তার অধীন, তার নিয়ন্ত্রণে সকল কিছুই। তিনি ছাড়া দ্বিতীয় নেই।- যিনি ছয় লোক স্তম্ভন করেছেন। যিনি জন্ম রহিত রূপে নিবাস করেন, তিনি সেইই একক। [বেদ-১/১৬৪/৬ ]

কোরান: আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা-হুঅল হাইয়ুল কাইয়ুম-। [২: ২৫৫] অর্থ: আল্লাহ তিনি ছাড়া আর কোন উপাস্য নেই। তিনি চিরঞ্জীব, অনাদি। তাঁকে তন্দ্রা, নিদ্রা স্পর্ষ করে না। দৃশ্য-অদৃশ্যে যা কিছু আছে সবই তাঁর- -তাঁর আসন দৃশ্য-অদৃশ্য ব্যাপীয়া পরিব্যপ্ত; ইহাদের রক্ষণা-বেক্ষণে তিনি ক্লান্ত হন না, তিনি কল্পনাতীত ও মহামহিম।

৮. বেদ: ঐশ্বরীক বল এবং দেবতাদের কাজ-এ দু’য়ের মধ্যে কোনই পার্থক্য নেই। [বেদ-১/১৭]

কোরান: অর্থাৎ; ইন্নাল্লাজীনা ইয়াকফুরনা বি-ল্লাহী অ রুছুলীহী- হাক্বান। [৪: ১৫০, ১৫১] অর্থ: যারা আল্লাহ ও রাছুলদের প্রত্যাখ্যান করে এবং তাঁদের মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি করে-প্রকৃত পক্ষে ইহারাই কাফির এবং ইহাদের জন্য কঠিন লাঞ্চনাদায়ক শান্তি রয়েছে।

৯. বেদ: ঈশাবাস্য মিদং সর্বযৎকিঞ্চ জগতাং জগৎ।

কোরান: অ কানাল্লাহু বিকুল্লে শাইঈম্মুহিত। অর্থ: একমাত্র আল্লাহ জগতের সব কিছুকে বেষ্টন করে আছেন।

১০. বেদ: যুচক্ষুষা না পশ্যাতি যেন চক্ষুংষি পশ্যাতি।

কোরান: লা তুদ্রিকুহুল আবছারু অ ইউদরিকুল আবছারা। অর্থ: নিরাকার আল্লাহকে অন্তর চক্ষুদিয়ে দেখতে হয়।

১১. বেদ: সূক্ষ্ম তৎসূক্ষ্ম তরং বিভাতি সবেত্তি বেদ্যং।

কোরান: অহুয়ল লতিফুল খবির। অর্থ: তিনি নিরাকার নির্বিকার জ্ঞানের আধার।

১২. বেদ: যতো বাচো নিবর্তন্তে অপ্রাপ্য মনসা স:।

কোরান: ছুম্মারজিয়িল-হাছির। অর্থ: দৃষ্টি ও কল্পনারও উর্দ্ধে সে।

১৩. বেদ: নতস্য প্রতিমা অস্তি।

কোরান: লাইছাকা মিছলি শাইউন। অর্থ: তার কোন উদাহরণ নেই।

১৪. বেদ: জ্যোতিসামপি তজ্জোতিস্ত।

কোরান: নুরুন আলা নুর। অর্থ: তিনি জ্যোতির জ্যোতি।

১৫. বেদ: একমেবাদ্বিতীয়ম নেহনা নাস্তি কিঞ্চন, নায়ং কুতশ্চিন বভুব কশ্চিৎ।

কোরান: আল্লাহু আহাদ, লা ইলাহা গাইরুকা, লাম ইয়ালিদ অলাম ইউলাদ। অর্থ: তিনি একাকার, অদ্বিতীয়, তিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই, তিনি জাত নন এবং তার কোন জাতক নেই।

১৬. বেদ: আত্মানং বিদ্ধি।

কোরান: অ’লামু- অ- তুহশারুন। [৮: ২৪ ] অর্থ: জেনে রেখো! আল্লাহ জীবের জীবনের কেন্দ্র বিন্দু হৃদয় অবস্থিত (হৃদয়ের গভীরে)। আর তাতেই তোমরা ফেরৎ যাবে।

১৭. শ্লোক: অসিত গিরি সমং স্যাৎ কজ্জুলং সিন্দু পাত্রে সুর তরুবর শাখা লেখনি পত্রমুর্বী লিখতি যদি গৃহিত্বা সারদা সর্বকালং তদপিতব গুনানামীশ পারং যাতি।

কোরান: অ লাও আন্না মা ফিলআর্দ্বে-হাকিম।অর্থ: পৃথিবীর সকল বৃক্ষ যদি কলম হয় এবং এই যে সমুদ্র ইহার সহিত যদি আরও সাত সমুদ্র যুক্ত করে কালি করা হয় তবুও আল্লাহর বর্ণনা নি:শেষ হবে না। আল্লাহ পরাক্রমশালী বিজ্ঞানময়।

১৮. ঋক:তিনি আকাশে বিচরণ করেন ভূমিতে বাস করেন।

কোরান: তার আসন আকাশ ও জমিন ব্যপীয়া।

১৯. ঋক: দিবারাত্র পরস্পর সঙ্গত হয়ে আসছে এবং যাচ্ছে।

কোরান: রাতকে দিনে এবং দিনকে রাতে পরিবর্তন করে।

২০. ঋক: আকাশ ও পৃথিবী পরস্পরকে বৃষ্টি ও বাস্পরূপে রস দান করছে।

কোরান: আল্লাহ আকাশ থেকে যে জল বর্ষণ করে মৃতুভূমিকে জীবিত করেন এবং সকল প্রকার প্রাণী তাতে ছড়িয়ে দিয়েছেন।
উল্লিখিত উদাহরণ ছাড়াও বেদ-গীতার অসংখ্য বাণী আছে যা কোরানের সঙ্গে হুবহু মিল। এছাড়া নতুন-পুরাতন প্রচলিত বাইবেলের সঙ্গে এর চেয়েও বেশি মিল দেখা যায়। অতএব এদের গ্রন্থবাহকগণও যে নিঃসন্দেহে ভাষার পার্থক্যে একাকার আল্লাহর রাছুল-নবি ছিলেন! এমনও প্রমান পাওয়া যায় যে, ভাষা, স্থান, কাল ভেদে একই ব্যক্তির জীবন চরিত ভিন্ন রূপ ধারণ করে।
উদাহরণ স্বরূপ:
মহাভারতের শান্তি পর্বের ৩৩৯ নং অধ্যায়ে বর্ণিত আছে যে, নারায়ণ ব্রহ্মাকে সৃষ্টি করে তাকে বর প্রদান করেন যে, “ব্রহ্মা সর্বকালে সর্বলোকে মানুষের অধ্যক্ষ হবেন।” এ কথাই বাইবেলের আদিপর্বের ১২:৩ আয়াতে বলে যে, “পৃথিবীর যাবতিয় গোষ্ঠী তার দ্বারা আশীর্বাদ প্রাপ্ত হবেন।” অনুরূপ একই ব্যক্তির কথা কোরান বলছে, ‘কালা ইন্নি যায়েলুকা লীন্নাছে ইমামান।’ [২: ১২৪] অর্থ: (আল্লাহ) বললেন, নিশ্চয়ই আমি তোমাকে মানব জাতির ইমাম করেছি।
ব্রহ্মা সম্বন্ধে মহাভারতে বর্ণিত, “পিতা ব্রহ্মা এক পর্বতে যজ্ঞ করেছিলেন এবং সেখানে একটি ব্রহ্মশালা প্রতিষ্ঠিত আছে। ব্রহ্মা কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত কূপ প্রদক্ষিণ করতে হয়। এই কূপে কেশমুন্ডন করে স্নান করলে পূণ্য অর্জিত হয়; ব্রহ্মাকে পৌত্তলিকগণ অগ্নিকুন্ডে নিক্ষেপ করেছিল, কেশাগ্র পর্যন্ত অগ্নি স্পর্ষ করতে পারেনি ইত্যাদি” ঘটনা প্রবাহের সঙ্গে ইব্রাহিমের মুর্তি ভাঙ্গা, অগ্নিতে নিক্ষেপ, কোরবানী, কাবা ঘরের কাহিনী, জমজম কুপ, কেশমুন্ডন করে সেলাই বিহীন কাপড়ে কাবা প্রদক্ষিণ ইত্যাদি হুবহু মিল রয়েছে। আজও ব্রাহ্মণ, পুরেহিত, বৌদ্ধ ভিক্ষুগণ সেলাই বিহীন কাপড় ও মাথা মুন্ডন করে পুজা পাঠ করেন।
হিন্দুদের দাবি বেদ-গীতা নকল করে বাইবেল রচিত হয়েছে; খ্রিস্টানদের দাবি বাইবেল নকল করে কোরান রচিত হয়েছে। মোসলমানগণ এসকল দাবি খন্ডাতে পুরোপুরি ব্যর্থ তদুপরি তারা দাবি করছে কোরানের অনুসরণে আজকের বিজ্ঞান অনবরত আবিষ্কার করে চলছে। মূলতঃ সকলের দাবি সত্য যেহেতু একই সংবিধান। তাই কোরানে আল্লাহর ঘোষণা ‘অতীতের সকল ঐশী গ্রন্থের সংরক্ষক ও সমার্থক এই কোরান। এতে নতুন কিছুই নেই। আল্লাহর বিধানে (সুন্নতে) কখনও রদবদল হয় না।’ অতএব সকল ঐশী গ্রন্থের যেখানে যেখানে মিল আছে তা আলবৎ একই আল্লাহর এবং যেখানে মিল নেই তা চতুর, ধুরন্দর মনুষ্যরূপী ইবলিসের রচিত ও সংযোজিত শরিয়ত।
‘নবি-রাছুল শেষ নয়’ অধ্যায় অসংখ্য আয়াতে পরিস্কার ঘোষণা করে যে, অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের ঐশী গ্রন্থের উপর যারা বিশ্বাস করে/করবে তারাই উপাস্যের প্রদর্শিত পথে স্থির রয়েছে এবং তারাই সফলকামী।
আয়াতগুলির ব্যাখ্যা করতে গিয়ে আল্লামাগণ এটাই বুঝাতে চান যে, ‘অতীতের ঐশী গ্রন্থ সত্য ছিল, তা সত্য সত্যই আল্লাহর কেতাব ছিল, নবিগণ সত্য ছিল, শুধু এটুকুই বিশ্বাস করতে হবে, মানতে হবেনা।’
আল্লাহর অহি ছিল, সত্য ছিল, মানব কল্যাণের নিমিত্তে ছিল অথচ মানতে হবে না, এ কেমন কথা! ধারণাটি একান্তই ব্যক্তিগত ও বালসুলভ এবং আয়াতটির সঙ্গে তিল পরিমাণও সম্পর্ক নেই বলেই মনে হয়। কোরান বার বার ঘোষণা করে যে, এই কোরান অতীত গ্রন্থের বিশদ ব্যাখ্যা এবং উহারই সমার্থক, সংরক্ষক মাত্র। অর্থাৎ অতীতের সকল ঐশী গ্রন্থ মানেই এই কোরান; এতে তিল পরিমাণও নতুনত্ব নেই। অতএব ওটা ‘বিশ্বাস করতে হবে, মানতে হবে না,’ কথাটার কোন বিষয়বস্তু নেই বলেই মনে হয়। কারণ এতে কোরানকেই অস্বীকার করা হয়। বরং “বেদ, শ্রুতি, গীতা, অর্থব, সামীয়, ইয়াসরেবীয়, ত্রিপিটক, জেন্দাবেস্থা, তোরাহ, ইঞ্জীল ইত্যাদি ঐশী গ্রন্থ মানেই কোরান।” এটাই আয়াতের প্রধান বিষয়বস্তু। এর পরেও যদি কারো সন্দেহ থাকে, তবে পুনঃ দেখুন ‘সুন্নত’ অধ্যায়; সেখানে আল্লাহ কয়েকবার ঘোষণা করেছে যে,‘আল্লাহর বিধি-বিধান বা সংবিধানে কখনও কোন পরিবর্তন, পরিবর্ধন বা রদ-বদল হয় না; অর্থাৎ ভাষাভেদে কোরান কালাকালভেদী অপরিবর্তনীয় ছিল আছে এবং থাকবে। আদম থেকে আজ অবধি অতঃপর ভবিষ্যতেও আল্লাহর এই বিধানে পরিবর্তন হবে না, একমাত্র ভাষার ব্যবধান ছাড়া।
কোরানের ঘোষিত ভাবধারা মতে কোরানকে বিশ্ব সমাজে উপস্থাপন করলে, আজ বিশ্বের জন সংখ্যার ৯০% শতাংশই ‘মোসলেম’ (ভদ্র, আর্য, আদর্শ বা শান্তিবাদী) নামেই পরিচিত হ’তে গর্ববোধ করতো, সাম্প্রদায়িকতার মূল উৎপাটিত হ’তো এবং পৃথিবীর অর্ধেক সম্পদ মানুষ হয়ে মানুষের খুনে গোলা-বারুদ, এটম বোমাও তৈরি করতে হ’তো না।
আল্লামাদের ধারণা, অতীতের গ্রন্থ মানতে গেলে, যিশুকে আল্লাহ বলতে হয়, ত্রিত্ববাদে বিশ্বাস করতে হয়, হিন্দুদের মতে, ৩৩ কোটি দেবতার পুজা করতে হয়, বৌদ্ধদের মত নিরীশ্বরবাদী হ’তে হয় ইত্যাদি; তাছাড়া কোরানে অতীতের সকল ধর্ম অবৈধ ঘোষণা করেছে ইত্যাদি।
প্রধানতঃ অতীতের সকল ধর্মাধর্ম ও বিশ্বাস মনুষ্য রচিত উপনিষদ, টেস্টামেন্ট তথা দু’নম্বরী বা উপ-ধর্ম গ্রন্থ ভিত্তিক; ঐশী গ্রন্থভিত্তিক নয় বলেই কোরানে ওটা অবৈধ ঘোষণা করেছে। আর সেই একই ঘোষণা মতে মোসলেম জাতির মনুষ্য রচিত যত উপ-ধর্ম গ্রন্থ আছে, সেগুলিও অবৈধ বলে বিবেচিত হওয়া একান্ত যুক্তিসঙ্গত ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন